সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি : নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যার সরকারি হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। জনবল সংকট, পরিক্ষা নিরিক্ষার মেশিনপত্র নেই, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, রেগী বহনকারি গাড়িসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হাসপাতালটি।
বিশেষ করে চাহিদা মত চিকিৎসক নেই, এক্স-রে ও প্যাথলজি পরীক্ষা দীর্ঘদিনের সমস্যা। শয্যা সংখ্যার সমস্যা। আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে হাজারো রোগীর ভীর এ হাসপাতালে। লোকবল, চিকিৎসক ও মেশিনপত্র সংকটের কারণে প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানের মানুষ। সীমিত সামর্থ্য আর অস্থায়ী ব্যবস্থার ওপর ভর করে চলছে হাসপাতালটি। এদিকে রোগীদের খাবারের মান নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছে।

কুন্দল এলাকার এক প্রবীন ব্যক্তি বলেন, ১৯৬২ সালে মাত্র ১৭ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে এ হাসপাতালটি। স্বাধীনতার পর এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। তারপর ২০১৩ সালে ১০০ শয্যায় রূপান্তরিত হলেও সেবার পরিসর ও মান সেই অনুযায়ী বাড়েনি।


হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, এখানে চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ৪০ টি, কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ১৮ জন। ১১ জন সিনিয়র কনসালট্যান্টের বিপরীতে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র একজন। জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১০টি পদের মধ্যে আছেন ৫ জন। নার্স, টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য সহায়ক কর্মীর ঘাটতিও প্রকট। ফলে প্রতিদিন দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকায় শয্যা সংকট চরমে পৌঁছেছে। এখানে দৈনিক আউটডোরে ১ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন এবং ইনডোরে ভর্তি থাকেন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ রোগী।
২২ ডিসেম্বর সোমবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে টিকিট কাউন্টার পর্যন্ত রোগীদের দীর্ঘ লাইন। বেডের অভাবে অনেক রোগীকে ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে থাকতে হচ্ছে। এক্স-রে কক্ষটি তালাবদ্ধ, পাশে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে থাকা যন্ত্রপাতি। হাসপাতাল চত্বরে জমে থাকা আবর্জনা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিকে আরও হতাশাজনক করে তুলেছে।
বিভিন্ন স্থান ঘেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, হাসপাতালের এক্স-রে ও প্যাথলজি পরীক্ষার বেশির ভাগই বন্ধ থাকায় বাইরে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে, যা দরিদ্র মানুষের জন্য বাড়তি আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স দুটিও দীর্ঘদিন ধরে বিকল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রোগীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই, নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও ঘাটতি রয়েছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে সঠিক সময়ে সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও ওষুধ হাসপাতালে না থাকায় বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে, ফলে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জানান, প্যাথলজির যন্ত্রপাতিতে কারিগরি সমস্যা থাকায় এক্স-রে ও বিভিন্ন পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে এবং মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশেদ হোসেন বলেন, যন্ত্রপাতি মেরামত ও জনবল সংকট নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দ্রুত চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ, যন্ত্রপাতি সচল করা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। এসব পদক্ষেপ না নিলে এই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা আরও বড় সংকটে পড়বে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available