রংপুরে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে সাংবাদিককে হত্যার হুমকির ঘটনায় মামলা
                                                             রংপুর ব্যুরো : অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করায় রংপুরের মাই টিভি প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসানকে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় পীরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক।এ ঘটনায় ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পীরগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মহিবুল ইসলাম, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের শাখা ব্যবস্থাপকসহ মামলায় ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে এছাড়াও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।উল্লেখ্য গত ২৯ এপ্রিল বিকেলে কুরিয়ার সার্ভিসে ওই প্রতিনিধির নামে দুটি পার্সেল আসে। এতে দুটি কাফনের কাপড়ের সঙ্গে দুটি প্রিন্ট করা চিঠি ছিল। চিঠিতে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। মাই টিভিতে কয়েকটি ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান মাই টিভির রংপুর ব্যুরোপ্রধান মাহমুদুল হাসান। কাফনের কাপড় ও চিঠিগুলো গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে পাঠানো হয়েছে। প্রেরকের ঠিকানায় পীরগঞ্জের আরেক সাংবাদিক মিলনের নাম ও ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়।চিঠির একটি খামে লেখা ‘অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি তোর কারণে। এবার আমার খেলা শুরু। ঠিকমতো পছন্দের খাবার খেয়ে নে রে হারাম খোর।’অপর খামে লেখা ‘ভাটা মালিকের কাজই মূলত সব সময় আগুন নিয়ে খেলা করা, তোর সময় শেষ, রংপুর মিঠাপুকুর বা সুবিধামতো জায়গা পেলেই খেল খতম। অপেক্ষার প্রহর গণনা শুরু।’ঘটনাটি উদঘাটন করতে গিয়ে দেখা যায় গোবিন্দগঞ্জ সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে পুরো দিনের সিসি ফুটেজ সংরক্ষিত থাকলেও পার্সেল বুকিং এর সময়কার মাঝখানের সিসি ফুটেজ উধাও। পার্সেল বুকিংকারীর নাম ঠিকানা ব্যবহার করলেও তার ভোটার আইডি কার্ড সংরক্ষণ করেনি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের দায়িত্বরা। বুকিং এ যার নাম ও ফোন নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে তা একজন সাংবাদিকের। বুকিং ও সিসি ফুটেজর বিষয়ে তেমন উত্তর দিতে পারেনি শাখা ব্যবস্থাপক।এর আগেও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরায় নকল গো-খাদ্য ভুষি তৈরির কারখানায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েও হামলার শিকার হয়েছিলেন সাংবাদিক মাহমুদুল হাসানসহ তিনজন সংবাদকর্মী।মুঠোফোনে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান প্রতিবেদককে জানান, পীরগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে বেশ কয়েকটা সংবাদ করেছি এবং তার বিষয়ে যেনো সংবাদ প্রকাশ না করি সে বিষয়ে তার স্ত্রী ও বিভিন্ন লোক মারফতে বাঁধা নিষেধ করেছেন এবং হুমকিও প্রদান করেছেন। এমনকি মামলা করার দু’দিন আগেও আমার এক সহকর্মীকে বলেছেন দেখি ওই সাংবাদিকের কত বড় ক্ষমতা আমার নামে মামলা দিয়েই কিছুই করতে পারবে না। পরে যেনো সামাল দেয়, সে সাংবাদিক হয়েছে তো কি হয়েছে। এভাবেই আমাকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন টিটিসির অধ্যক্ষ মহিবুল ইসলাম। সে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হত্যার উদ্দেশ্যে এসব করেছে। আমি অনুরোধ করছি এই ঘটনার সাথে যারাই জড়িত আছে প্রশাসন যেনো সুষ্ঠু তদন্তসহ মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে।রংপুর রিপোটার্স ক্লাব ও রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরপিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান বলেন, সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে নানা সময়ে সাংবাদিকদের ভয়ভীতিসহ হত্যার হুমকি দেয় দুষ্কৃতকারীরা এটা স্বাধীন সাংবাদিকতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।’এ সময় তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদল বলেন, সারা দেশে যেভাবে সাংবাদিকদের উপরে হামলা হচ্ছে এভাবে হামলা চলতে থাকলে এই পেশায় ভালো মানুষ আর আসতে চাইবে না। যারা সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যেনো ব্যবস্থা নেন এবং অপরাধীরা যেনো কোনো ভাবেই ছাড় না পায়।পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে এবং আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আর ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।