নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের প্রকল্প অনুমোদনে বিটিসিএ’র উদ্বেগ
                                                             নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি (বিইজেডএ) কর্তৃক গত ২৭ এপ্রিল ফিলিপ মোরিস বাংলাদেশ লিমিটেডকে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের প্রকল্প অনুমোদন প্রদান করায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস (বিটিসিএ)।২৬ অক্টোবর রোববার বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস-এর (বিটিসিএ) আহ্বায়ক ইকবাল মাসুদ, সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম তাহিন, আমিনুল ইসলাম সুজন, সুসান্ত সিনহা, সৈয়দা অনন্যা রহমান, ফারহানা জামান লিজা, সামিউল হাসান সজীব ও আবু রায়হানের যৌথ প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানায়।সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-এই পণ্যটি মূলত গামের মতো, যা মুখে রেখে ব্যবহার করা হয় এবং মুখের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে নিকোটিন রক্তে শোষিত হয়। এটি ই-সিগারেট বা ভ্যাপের বিকল্প পণ্য হিসেবে বাজারজাত করা হলেও, এতে উচ্চমাত্রার নিকোটিন থাকে যা দ্রুত নেশা সৃষ্টিকারী এবং স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।বিশ্বের বহু দেশ ইতোমধ্যে নিকোটিন পাউচ উৎপাদন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ বা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে এনেছে। বেলজিয়াম, রাশিয়া, উজবেকিস্তান, ফ্রান্সসহ অন্তত ৩৪টি দেশ এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধন প্রক্রিয়া চলছে এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সরকারের ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যৌথভাবে ঘোষণা দিয়েছে, তখন এই ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন প্রদান একটি প্রাণঘাতী সিদ্ধান্ত।বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মহামান্য আপিল বিভাগ তার এক ঐতিহাসিক রায়ে নির্দেশনা দিয়েছে যে, যৌক্তিক সময়ে দেশে তামাক ব্যবহার হ্রাস করতে হবে এবং নতুন কোনো তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া যাবে না। বরং বিদ্যমান তামাক কোম্পানিগুলোকে বিকল্প, অ-তামাকজাত পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করার নির্দেশনাও রয়েছে। ফলে বিইজেডএ কর্তৃক প্রদত্ত এই অনুমোদন স্পষ্টভাবে আদালতের নির্দেশনার পরিপন্থী এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।মাত্র ৬৩ জন লোকের কর্মসংস্থান এবং প্রায় ৫১ কোটি টাকার বিনিয়োগের দোহাই দিয়ে জনগণের জীবন, স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণকে ঝুঁকির মুখে ফেলা কোনোভাবেই ন্যায্য নয়। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারের এই সময়ে, এমন একটি নিকোটিন-নির্ভর, নেশা সৃষ্টিকারী পণ্যের উৎপাদন অনুমোদন নীতি, নৈতিকতা ও আইন-বিরোধী পদক্ষেপ।সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস (বিটিসিএ) জোর দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের দেওয়া এই অনুমোদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, এবং আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে যারা এই অনুমোদন প্রদান করেছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে নিকোটিন পাউচসহ সকল নিকো টিনজাত পণ্যকে আইনের আওতায় এনে উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যবান ও কর্মক্ষম জাতি গঠনের যে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই মহৎ প্রয়াসে সকলের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা জরুরি। জনগণের ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন কোনো পণ্য উৎপাদন বা অনুমোদন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।