নিজস্ব প্রতিবেদক: লাখো মুসল্লির অশ্রু সজল নয়নে আমিন-আমিন ধ্বনিতে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর তিন দিনের ইজতেমা। শেষ দিনে মুসল্লির ঢল নামে। সুবিশাল প্যান্ডেলের ভিতরে-বাইরে মুসল্লির উপস্থিতি ছাড়িয়ে রাস্তায় গিয়ে পৌঁছে।

২৬ ডিসেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত হয় আখেরি মোনাজাত। মুসল্লিরা রবের প্রার্থনায় দুই হাত তুলে কান্নায় আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। এ সময় ‘আমিন আমিন ধ্বনিতে ইজতেমা ময়দানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ইসলামের জীবন বিধান মেনে সারাবিশ্বে নেকীর দাওয়াত পৌঁছে দিতে মহান রবের সাহায্য কামনা করা হয়।


দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি, বিশেষ করে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের হেফাজত কামনা করে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন দাওয়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নীগরান (সভাপতি) আলহাজ্ব আব্দুল মুবিন আত্তারী, মূল বয়ান জুময়ার পূর্বে পেশ করেন দাওয়াতে ইসলামী সারা বিশ্বের নীগরান (সভাপতি) আল্লামা মুহাম্মদ ইমরান আত্তারী, বিশেষ বয়ান করেন দাওয়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর জিম্মাদার (মিডিয়া বিভাগ) মুফতি মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম মুজাদ্দেদী আত্তারী। তাসাউরে মদিনা করেন দাওয়াতে ইসলামী বাংলা জিম্মাদার আলহাজ মুহাম্মদ রিয়াজ আত্তারী।
শেষ দিন শুক্রবার সকাল থেকে জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগগণ কোরান-হাদিসের আলোকে ইসলামের মৌলিক বিষয়ে বয়ান করেন। পিতা মাতার গুরুত্ব, জুলুম-অত্যাচারের পরিণতি, কু-ধারণা থেকে বিরত থাকা, আল্লাহর পথ ও দাওয়াত ইসলামী ইত্যাদি। এসব বয়ানের ফাঁকে ফাঁকে চলে হামদ ও নাতের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা।
শেষদিনের ইজতিমায় ধারাবাহিকভাবে এসব বিষয় তুলে ধরে বয়ান করেন দাওয়াতে ইসলামীর মোবাল্লিগ মাওলানা আবেদীন কাদেরী আত্তারী, মুহাম্মদ লিয়াকত কাদেরী প্রমুখ। আল্লাহ পাকের নির্দেশিত পথে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিঃশর্ত অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগণ বলেন, আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনাদর্শ অনুসরণেই মানবতার মুক্তির সনদ নিহিত।
ইসলামের জীবন বিধান মেনে চলা গেলে এবং প্রিয় রাসুলের সুন্নাতের রঙ্গে রাঙ্গায়িত হয়ে মোত্তাকি হতে পারলেই আপনার দুনিয়া-আখেরাতের মুক্তি মিলবে। আর প্রিয় হাবিবের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসাই ঈমানের পূর্বশর্ত। আল্লাহ পাক ও তার প্রিয় রাসূলের সৃষ্টির জন্যই হতে হবে আমাদের নিয়ত, চিন্তাধারা, কর্মকাণ্ড সবকিছুই।’ বিশ্বের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে ইসলামে নেকীর দাওয়াত পৌঁছে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার আহ্বান জানান তারা।
শরীয়ত মতে যথাযথভাবে নামাজ আদায়ের আহ্বান জানিয়ে তারা আরও বলেন, আল্লাহ পাক ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে নামাজ আদায় করতে বলেছেন ঠিক সেভাবেই নামাজ পড়তে হবে। নামাজেই যত প্রশান্তি। লোক দেখানো নামাজে হবে না। বরং শেষ বিচারে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ, রয়েছে কঠিন শাস্তি। সন্তানকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করতে হবে। সুসন্তানের আমল নিজের জন্য তো বটে, তার মা-বাবার জন্যও নাজাতের অসিলা হবে- বলেন দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগরা।
গত ২৪ ডিসেম্বর বুধবার ফজরের নামাজের পর শুরু হয় তিনদিনের সুন্নাতে ভরা এই ইজতেমা। ইজতেমায় সারা দেশ থেকে লাখো আশেকানে রাসূল-এর যোগদানের মধ্যদিয়ে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তিনদিনের ইজতেমায় বিষয়ভিত্তিক বয়ান করেন দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগরা। ইজতেমায় এত লোক তিনদিন তিনরাত যাপন করলেও কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাৎক্ষণিক সুকিচিৎসার জন্য করা হয় মেডিকেল ক্যাম্প। ইজতেমায় আগামী ১৮.১৯.২০ ডিসেম্বর ২০২৬ ঢাকায় আন্তর্জাতিক ইজতেমা তারিখ ঘোষণা করা হয়।
দাওয়াতে ইসলামীর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পাশাপাশি ইজতেমায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা দিনরাত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে। ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের পরপরই নেকির দাওয়াত পৌঁছে দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১২ দিন, ৩০ দিন ও ৬৩ দিনের ১২ মাসের জন্য ১১২টি মাদানি কাফেলা সফর শুরু করেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available