কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: এক সময়ের গৌরবময় ঐতিহ্যের বাহক টালি শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময় গ্রামবাংলার ঘরবাড়িতে টালির ছাউনি ছাড়া কিছু কল্পনাই করা যেত না। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি জটিলতা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, পুঁজির অভাব ও আধুনিক বিকল্প সামগ্রীর আগ্রাসনে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহ্যবাহী শিল্প।

ইতালি পাড়া নামে সুপরিচিত কলারোয়া পৌর এলাকার মুরারীকাটি ও শ্রীপতিপুর গ্রামে একসময় ৪১টি টালি কারখানা সচল ছিল। শত শত শ্রমিকের কর্মচাঞ্চল্যে মুখর থাকত পুরো এলাকা। স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজারো পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত এই শিল্পের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন—বর্তমানে টিকে আছে মাত্র ৭টি কারখানা। এতে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিকের জীবিকা আজ হুমকির মুখে পড়েছে। অনেকে কাজ হারিয়ে অন্য পেশায় ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন।


কারখানা মালিকরা জানিয়েছেন, একদিকে জ্বালানির দাম ও শ্রমিকের মজুরি বাড়লেও টালির দাম বাড়েনি। ফলে টানা লোকসানে অনেকেই কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের অভিযোগ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহায়তা না থাকায় ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে যাচ্ছে।
টালি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোস্ত চন্দ্র পাল বলেন, আগে প্রতি মৌসুমে কয়েক লাখ টালি বিক্রি করতাম, এখন বিক্রি হয় সামান্য। উৎপাদন খরচ বাড়লেও পন্যের দাম বাড়েনি। সরকার যদি সহজ শর্তে ঋণ ও বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয় তাহলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।
শ্রমিকদের অবস্থাও করুণ। আগে যেখানে টালির কারখানায় নারী-পুরুষ কাজ করে পরিবার চালাত, এখন অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন।
শ্রীপতিপুর গ্রামের শ্রমিক আমির হোসেন বলেন, দিনে দিনে টালির চাহিদা কমছে। কাজ না থাকলে আমরা খাব কী? বাধ্য হয়ে অনেকে দিনমজুরি, ইটভাটায় কাজ করছে কিংবা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।
এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, ঐতিহ্যবাহী টালি শিল্পকে রক্ষা করতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। টালি শিল্পকে জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি কারিগর ও ব্যবসায়ীদের ঋণ সহায়তাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা মনে করেন, সময়মতো সরকারি উদ্যোগ ও আর্থিক সহায়তা মিললে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এটি শুধু কর্মসংস্থানই সৃষ্টি করবে না, বরং দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণেও রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available