নিজস্ব প্রতিবেদক : ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! জন্ম থেকেই নবজাতক শিশুর জীবন কাটছে কারাগারে। তবে, জন্মের পর পরই হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় থাকলেও এখন স্থান হয়েছে কারাগারের চার দেয়ালের ভিতরে। আসামি মায়ের সঙ্গে ১১ দিন বয়সী নবজাতকটিও খুলনা জেলা কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছে।
২১ সেপ্টেম্বর রোববার মায়ের সঙ্গে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে গ্রেপ্তার মা শাহজাদীকে খুলনার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে উত্থাপন করা হয়। আদালতে শাহজাদীর পক্ষে কেউ জামিন আবেদন না করায় কোনো শুনানি ছাড়াই আদালত শাহজাদীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আর শিশুটিকে দেখাশোনা করার কেউ না থাকায় শাহজাদীর সঙ্গে তাকেও কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর খুলনা মহানগরীর রূপসা এলাকার একটি হাসপাতালে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার আদাঘাট গ্রামের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ফকিরহাটের মেয়ে শাহাজাদীর (৩৬) কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যা সন্তান। তাদের ঘরে আগে চার কন্যা সন্তান থাকায় এবার ছেলে হবে— এমন প্রত্যাশা ছিল স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। কিন্তু ছেলে না হওয়ায় স্ত্রীকে হাসপাতালেই ফেলে চলে যান স্বামী সিরাজুল।
এদিকে, পরিবারের চাপ ও হতাশার মধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর ঘটে অঘটন। একই হাসপাতাল থেকে আরেক প্রসূতির চার দিন বয়সী ছেলে নবজাতক চুরি হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও পুলিশের তৎপরতায় উদ্ধারও করা হয়।
শাহাজাদীর মা নার্গিস বেগমের (৫৫) কাছ থেকে চুরি হওয়া নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। তখন আটক হন তিনি। সম্পর্কে নবজাতকের নানী হন তিনি।
এ ঘটনায় শাহজাদী ও তার মাকে আসামি করে মানবপাচার আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নার্গিস বেগমকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ৬ দিন ধরে তিনি কারাগারে রয়েছেন। আর কন্যা শাহজাদী নবজাতক শিশুকে নিয়ে হাসপাতালের একটি কক্ষে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তবে শাহজাদীর মা পুলিশের কাছে দাবি করেন, মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে পুত্র শিশুটি চুরি করেছিলেন তিনি।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপক এনামুল হক জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর শিশুর বাবা ও মামা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এর আগে আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে ছেলে সন্তান হওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। পরদিন সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। এরপর থেকে বাবা সিরাজুল ইসলাম আর হাসপাতালে আসেননি। রবিবার ছাড়পত্রের দিনও শিশুর বাবা ও মামা হাসপাতালে আসেনি। দূর সম্পর্কের এক ভাই শাহজাদীর বিল পরিশোধ করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানা পুলিশের এসআই শাহীন কবির জানান, আসামি সুস্থ হয়ে যাওয়ায় আইন মেনে তাকে আদালতে উত্থাপন করা হয়।
খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে কর্মরত প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই বোধন চন্দ্র বিশ্বাস (জিআরও-সদর) জানান, আদালতে শাহজাদীর পক্ষে কেউ জামিন আবেদন করেননি। নিয়ম অনুযায়ী আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রথা অনুযায়ী মানবিক বিবেচনায় তাকে মায়ের সঙ্গে থাকতে দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available