নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বিএনপির ৩১ দফার নানাবিধ গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

তিনি বলেন এসব যেন রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি না হয়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়। সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন দায়িত্ব-অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে নদী রক্ষায়, পরিবেশ রক্ষায় রাজনৈতিক বাধার কথাও বলেন। তিনি মনে করেন, উল্লিখিত দফাগুলো প্রত্যেকটিই ভাল-এখন এটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলেই হয়।


২৫ নভেম্বর মঙ্গলবার রাজধানী ফার্মগেটের ডেইলি স্টার ভবনে বাংলাদেশ টুমরো ফোরামের আয়োজনে ‘বিএনপির ৩১ দফা : গুণীজন ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাসান মামুন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক মাহমুদ হোসেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর মুহাম্মদ আশরাফুজ্জামান (অব.), ইউনাইটেড নেশনের সিভিল সোসাইটি রিপ্রেজেন্টেটিভ আবুল কাশেম শেখ, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার বিজেসির সদস্য সচিব ও আরটিভির হেড অব নিউজ ইলিয়াস হোসেন।
বক্তারা বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রসঙ্গে এখানে বিএনপি যা বলেছে, তাই –ই যথার্থ। এর ব্যতিক্রম হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতির আরও সংকটে পড়েতে পারে। মিডিয়া কমিশন নিয়ে বলেন গণমাধ্যম নিয়ে যে কথা বলা হয়েছে, সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, কতটুকু সেটাই প্রশ্ন। ক্ষমতার ভেতর-বাইরে থাকলে গণমাধ্যম ভাবনা একই রকম নয় বলে উল্লেখ করেন। রেইনবো নেশন নিয়ে বিএনপির ভাবনা আর পরিস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ড. ফেরদৌসী বেগম নারী অধিকার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি মনে করেন, এই বিষয়গুলোতে ৩১ দফায় আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিল, বিশেষ করে নারী অধিকার ও শিক্ষায়। দেশে শিক্ষায় উন্নতি হয়েছে তবে সেটা গুণগত নয়।
তিনি বলেন, ৩১ দফা বাস্তবায়ন করার জন্য সবার আগে দরকার রাজনৈতিক সরকার। এ কারণে দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক জুয়েল রানা, রাজনৈতিক বশ্লেষক এস. এম হুমায়ুন পাটোয়ারী।
বক্তারা বলেন, শিক্ষায় দুর্নীতি থাকলে ৩১ দফায় যে রূপরেখা রয়েছে তাতে সুফল পাওয়া যাবে না। কাঠামোগত দুর্নীতি ও গুণগত দুর্নীতি ব্যাপক মাত্রায় বিদ্যামান এখানে। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়েও কথা বলেন বক্তারা। উনারা মনে করেন, বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ৩১ দফার গুরুত্ব রয়েছে, তবে তা বাস্তবায়নে বড়ো চ্যালেঞ্জ বা বাধা হল দুর্নীতি।
বিসিকের সাবেক পরিচালক আবু তাহের খান গোলটেবিল বৈঠকে নিজের চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমলাতন্ত্রের ভেতর যে বিভাজন বা দলীয় চর্চা দেখা দেখেছি, তাতে হতাশ হই’। তিনি ৩১ দফায় কৃষিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন। এই সময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, সাংবাদিক ও গবেষক ড. কাজল রশীদ শাহীন, ডেমোক্রেসি রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এ কে এম রেজাউল করিম।
বক্তারা ক্ষমতার ভারসাম্য, জাতীয়তাবাদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, অর্থনৈতি চ্যালেঞ্জ, সামাজিক সাম্য নিয়ে কথা বলেন।
গোলটেবিল বৈঠকে গুণীজনদের অভিমত হল,৩১ দফা বিএনপির হলেও এটি যখন প্রণয়ন হয়, তখন বিএনপির সমমনা অন্যদলগুলোও এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার নিয়ে যেসব কমিশন গঠিত হয়েছে। যে সকল কাজ চলমান- তার অনেককিছুই ৩১ দফায় রয়েছে বলে মনে করেন।
বক্তারা দাবি করেন, বিএনপি’র ৩১ দফায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করার রয়েছে। বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে। বক্তারা বলেন সবই করা সম্ভব হবে যদি রাজনৈতিকদের সদিচ্ছা থাকে। তার জন্য সবার আগে জাতীয় নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
গোলটিবিল বৈঠকে বক্তাদের অভিমত, রাষ্ট্র সংস্কার, গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চা, ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, সুশাসন ও জবাবদিহির নতুন কাঠামো গঠনের প্রতিশ্রুতি ৩১ দফায় যেভাবে রয়েছে বিএনপি যেন তা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে।
গুণীজনরা মনে করেন- রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টাতে চাইলে এ দফাগুলো একটি নীতিগত ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ কমিয়ে সংসদ, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে পরিচালনার ধারণা অনেকেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা অভিমত দেন, এই দফাগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেকসইকরণ ও নাগরিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা বড় গুরুত্ব বহন করে। স্বচ্ছতা, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈষম্যহীনতা নিশ্চিতে উল্লেখিত সংস্কারসমূহ বাস্তবায়ন হলে বিনিয়োগ ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক আস্থা ফিরতে পারে। মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হলে সমাজে যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা ভাঙার সুযোগ আসবে।
তবে অনেক গুণীজনই সতর্ক করেছেন- দফা ঘোষণা যথেষ্ট নয়; রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে এসব প্রতিশ্রুতি কাগজে সীমাবদ্ধ থাকার ঝুঁকি রয়েছে। তাই এর সাফল্য নির্ভর করবে দলটি ৩১ দফার প্রতি কতটা অটল থাকে তার ওপর।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ টুমরো ফোরামের চেয়ারম্যান কবি, গবেষক ও রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট রাজ মাসুদ ফরহাদ।
তিনি বলেন, আজকের আলোচনায় আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে গুণীজনদের মত-দ্বিমত দুটোই শোনার। আমরা কেবল প্রশংসা শুনতে চাইনি, সমালোচনাও জানতে চেয়েছি। নতুন কি যুক্ত হতে পারে, কোথায় কোথায় আরও সংশোধন-সংযোজন-বিয়োজন করা যায় সেটাও আপনাদের কাছে আমাদের জানার আগ্রহ থেকে এই বৈঠক।
দলেন ভাইস চেয়ারম্যানও বলেন, আমরা মত-দ্বিমতা দুটোই জানতে চাই, শুনতে চাই। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ যে, আপনারা সেটা বলেছেন। আপনাদের পরামর্শগুলো বিএনপির দলীয় ফোরামে ও ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।
বাংলাদেশ টুমরো ফোরাম আয়োজিত ‘বিএনপির ৩১ দফা গুণীজন ভাবনা’ গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন নুসরাত লাবনী
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available